বিশেষ দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের এই ক্যাটাগরির রুলবুক আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছুদিন পর আপডেট করা হবে। আপডেট করা নতুন নিয়মে ক্যাটাগরিটির প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিযোগিতা পরিচিতি

এটি একটি একক প্রতিযোগিতা। এই ক্যাটাগরিতে একটি ড্রোনকে প্রোগ্রামিং করতে হবে যেন ড্রোনটি নিজে নিজে একটি ত্রিমাত্রিক মেজ (গোলকধাঁধা) সমাধান করে ভেন্যুতে প্রদত্ত নির্দিষ্ট মিশন ত্রিমাত্রিক পথে সম্পন্ন করতে পারে। প্রথমে ট্রায়াল রান করার পর  বিচারকের সামনে ড্রোন রান করে দেখাতে হবে এবং নিজের কোড জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের ড্রোন নিজেকে বাসা থেকে আনতে হবে। বিচারকের সামনে করা মেজ সল্ভিং এবং কোডের উপর নির্ভর করে নম্বর প্রদান করা হবে ও সর্বোচ্চ নম্বরধারী বিজয়ী হবে।

মূল থিম : Future Marine City Busan: Industry, Tourism, Culture

রেজিস্ট্রেশন

ড্রোন মেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটের নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্ট অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড- এর যেকোনো একটির স্ক্যানড কপি অবশ্যই জমা দিতে হবে। ড্রোন মেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য  রেজিস্ট্রেশন ফি ২০০ টাকা। প্রথমে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে নিজের প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এরপর প্রোফাইল থেকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নিজেদের দলের নিবন্ধন করতে হবে।  

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ

এইবছর ড্রোন মেজ প্রতিযোগিতা দুইটি পর্বে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমে অনলাইনে সকল প্রতিযোগী বাছাই পর্বে অংশ নিবে। বাছাই পর্ব থেকে নির্বাচিত সেরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা অফলাইনে সরাসরি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। অনলাইন বাছাই পর্বে অংশ নেয়া বাধ্যতামূলক। বাছাই পর্বে অংশ নিয়ে জাতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত না হলে জাতীয় পর্বে অংশ নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

অনলাইন বাছাই পর্ব

অনলাইন বাছাই পর্ব  নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে গুগল ফর্মে। গুগল ফর্মটি ৪ দিন খোলা থাকবে। 

বাছাই পর্বের গুগল ফর্মে যেসকল সম্ভাব্য টাস্ক থাকতে পারে – 

ক) ড্রোন মেজ প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা নিজের  একটি ড্রোনের পরিষ্কার ছবি সাবমিশন 

খ) উক্ত ড্রোনের সকল হার্ডওয়্যার ও প্রোগ্রাম করতে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের তালিকা

গ) গুগল ফর্মে দেয়া একটি নির্দিষ্ট পথে মিশন সমাধান করার জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করে সেই প্রোগ্রাম সাবমিশন  

ঘ) প্রপেলার গার্ড সহ পুরো ড্রোনের সাইজ উল্লেখ করা 

এছাড়াও আরও এক/একাধিক সারপ্রাইজ টাস্ক গুগল ফর্মে উল্লেখ থাকতে পারে। 

ফর্মে নির্ধারিত নির্দিষ্ট টাস্কসমূহ সম্পন্ন করে সাবমিট করতে হবে। বাছাই পর্বে অংশ নেয়া সব দলের টাস্কসমূহ যাচাই করে তাদের মধ্য থেকে যারা নির্বাচিত হবে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং শুধুমাত্র তারাই অফলাইনে জাতীয় পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

ড্রোনের ধরণ

১। ড্রোন অবশ্যই প্রোগ্রাম করা যায় এমন হতে হবে। 

২। নির্দিষ্ট কোন সেন্সর উপস্থিত থাকতে হবে ত্রিমাত্তিক মেজের ভিতর চলাচলের জন্য।

৩। ড্রোনের মধ্যে অবশ্যই প্রপেলার গার্ড (propeller guards) লাগানো থাকতে হবে সবগুলো প্রপেলারের সুরক্ষার জন্য। 

৪। ড্রোন কোনভাবেই ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। 

৫। বাসা থেকে সম্পূর্ণ ড্রোন এসেম্বল করে আনা যাবে এবং ভেন্যুতেও ক্যালিব্রেশবন বা অন্য কোন প্রয়োজনে ড্রোনের বিভিন্ন পার্টস খুলে আবার এসেম্বল করা যাবে। 

৬। ড্রোনের ব্যাটারি অবশ্যই সরাসরি ড্রোনের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। 

৭। প্রপেলার গার্ড সহ ড্রোনের সাইজ সর্বোচ্চ ২০*২০ সেন্টিমিটার হওয়া যাবে। নিচের চিত্রে এর উদাহরণ দেয়া হয়েছে। 

৮। উপরের ছবির মতই একটি চেকবক্সে প্রপেলার গার্ড সহ ড্রোনের সাইজ মাপা হবে জাতীয় প্রতিযোগিতার ভেন্যুতে। কোন কারণে যদি ২০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে যায় দৈর্ঘ্য অথবা প্রস্থ বরাবর – সেই ড্রোন দিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেয়া হবে না। 

ত্রিমাত্রিক মেজ 

ক) পিভিসি পাইপ বা অন্য আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে একটি ত্রিমাত্রিক মেজ জাতীয় পর্বের ভেন্যুতে থাকবে।

খ) মেজের উচ্চতা হবে ১৫০ সেন্টিমিটার (১০% কম-বেশি হতে পারে)। এই উচ্চতার মধ্যে ৩টি ফ্লোর থাকবে। সবচেয়ে নিচের ফ্লোরকে বলা হবে ফ্লোর ০, মাঝের ফ্লোরটি ফ্লোর ১, উপরের ফ্লোরটি ফ্লোর ২।

গ) মেজের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হবে সর্বোচ্চ ৫০০ বাই ৫০০ সেন্টিমিটার (১০% কম-বেশি হতে পারে)। তবে এরচেয়ে আরও কম সাইজের মেজ তৈরি হতে পারে।

ঘ) একেকটি ফ্লোরে বেশকিছু ঘর থাকতে পারে। প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হতে পারে সর্বনিম্ন ৫০ বাই ৫০ সেন্টিমিটার ও সর্বোচ্চ ৮০ বাই ৮০ সেন্টিমিটার (১০% কম-বেশি হতে পারে)। তবে ঘরগুলোর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৫০-৮০ সেন্টিমিটারের মধ্যে যেকোনো মানেরই হতে পারে; যা আগে থেকে বলা থাকবে না। যেমন ৫০ বাই ৭০ সেন্টিমিটার, ৬০ বাই ৮০ সেন্টিমিটার ইত্যাদি বিভিন্ন মানের ঘর একই মেজের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে।

ঙ) মেজের বিভিন্ন জায়গায় নানারকম অবজেক্ট থাকতে পারে; মেজে ড্রোন ঘুরার সময় কোন অবজেক্টে স্পর্শ বা আঘাত করতে পারবে না। প্রত্যেক অবজেক্টে আঘাত করার জন্য ৩ মার্ক করে পেনাল্টি হতে থাকবে।

প্রতিযোগিতার সময়

ক) প্রতিযোগিতায় প্রথমে ১ ঘণ্টা সময় দেয়া হবে মিশন ম্যাপ সলভ করে ট্রায়াল রান দেবার জন্য। ওই ১ ঘণ্টার ভিতরে বারবার লাইনে দাঁড়িয়ে মেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে যতবার খুশি ট্রায়াল রান দেয়া যাবে। এসময় ক্যালিব্রেশন করা, প্রোগ্রাম মডিফাই করা ইত্যাদি করা যাবে। তবে কোনোভাবেই অনলাইনে বা ফোনে কারও সাথে যোগাযোগ করা যাবে না ভেন্যু থেকে। এমন প্রমাণ পেলে সরাসরি প্রতিযোগিতা থেকে ডিসকোয়ালিফাই করা হবে।

খ) ১ ঘণ্টা সময় শেষ হবার পর বিচারকের সামনে চূড়ান্ত রান দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ বার রিস্টার্ট নেয়া যাবে। রিস্টার্ট নেবার জন্য ড্রোনে নতুন করে কিছু পরিবর্তন করতে ৪ মিনিট সময় দেয়া হবে।

গ) চূড়ান্ত রানে মেজ সলভ করার জন্য সময় পাওয়া যাবে ২ মিনিট।

মেজ সলভিং 

ক) ভেন্যুতে প্রথমেই একটি মিশন ম্যাপ দেয়া হবে। মিশন ম্যাপে দ্বিমাত্রিক কাগজে পুরো ম্যাপ দেয়া থাকবে নিচের ছবির মত-

খ) মিশন ম্যাপে বলা থাকবে কোন ঘর থেকে স্টার্ট (টেক অফ) এবং কোন ঘরে এন্ড (ল্যান্ড) করতে হবে। শুধুমাত্র এই দুইটি ঘরে ফ্লোর নম্বর ০ তে যাওয়া যাবে।

গ) ১ টি ঘরে কোন ফ্লোরে থাকা যাবে সেটি লেখা থাকবে ঘরে বড় করে বোল্ড করে। আর ওই ঘরে সফলভাবে ঢুকলে কত মার্কস পাওয়া যাবে সেটি লেখা থাকবে ছোট করে। যেমন একটি ঘরে লেখা আছে 

 2

14

এর অর্থ ওই ঘরে ফ্লোর ২ এ থাকতে হবে এবং ওই ঘরে প্রবেশ করে সফলভাবে সেই ঘর থেকে বের হতে পারলে 14 নম্বর পাওয়া যাবে।

ঘ) বিভিন্ন ঘরে কিছু অবজেক্ট থাকতে পারে যা লাল রং দিয়ে দেখানো হয়েছে। কোন ঘরে যদি অবজেক্ট থাকে, সেই ফ্লোরেই থাকবে যেই ফ্লোরের ভ্যালু ওই ঘরে দেয়া আছে। 

ঙ) একটি ঘরে যেই ফ্লোর দিয়ে ঢুকতে বলা হয়েছে সেই ফ্লোর  ছাড়া অন্য কোন ফ্লোর দিয়ে  ঢুকার চেষ্টা করলে সেটি ভুল ফ্লোর হিসাবে বিবেচিত হবে এবং সাথে সাথে ফাইনাল রান বাতিল হয়ে সর্বোচ্চ ১ বার রিস্টার্ট করার সুযোগ দেয়া হবে। 

চ) নতুন যেই ঘরে ড্রোন প্রবেশ করবে সেখানে যেই ফ্লোরে ঢুকার কথা, তার আগের ঘর থেকেই সেই ফ্লোরে উঠে বা নেমে তারপর প্রবেশ করতে হবে। 

যেমন পাশাপাশি দুইটি ঘর আছে 

1    2

2    3

বামপাশের ঘরে ঢুকতে হবে ফ্লোর ১ দিয়ে। এরপর ডানপাশের ঘরে ঢুকার আগে প্রথমে বামপাশের ঘরে থাকা অবস্থায়ই ফ্লোর ২ এ ড্রোন চলে যাবে এবং তারপর ডানপাশের ঘরে প্রবেশ করবে। এক্ষেত্রে ড্রোন  বামপাশের ঘরে ফ্লোর ১ এ থাকা অবস্থায় ডানপাশের ঘরে সরাসরি ঢুকে যেতে পারবে না এবং তারপর ডানপাশের ঘরে ফ্লোর ২ এ উঠলে গ্রহণযোগ্য হবে না।  

চ) ড্রোন কোনভাবেই মেজের ভিতর থেকে বের হয়ে যেতে পারবে না। যেমন সবচেয়ে বামপাশে থাকা একটি ঘর থেকে আরও বামে বেরিয়ে যাওয়া, সবচেয়ে ডানপাশের ঘর থেকে আরও ডানে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা ফ্লোর ২ থেকেও আরও উপরে উঠে যাওয়া যাবে না। এমন করলে সেটিও রিস্টার্ট হিসাবে গণ্য হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বিচারকের সামনে মাত্র একবারই রিস্টার্ট নেয়া যাবে। রিস্টার্ট নেবার পরও ড্রোন ঠিকমত মেজ সল্ভ করতে না পারলে যতটুকু সলভ করতে পেরেছে সেই অনুযায়ী নম্বর পাবে। 

ছ) কোন অবজেক্ট ( যা মিশন ম্যাপে লাল কালি দিয়ে দেখানো আছে) কিংবা মেজের বিভিন্ন ঘরের বর্ডারে থাকা পাইপ বা আনুষঙ্গিক উপকরণ ড্রোন স্পর্শ করলে সেটি অবজেক্টে স্পর্শ করা হিসাবে বিবেচিত হবে এবং প্রত্যেক অবজেক্ট স্পর্শের জন্য ৩ মার্ক করে পেনাল্টি হতে থাকবে। 

জাতীয় পর্বের বিচারকাজ 

জাতীয় পর্বে উপরে বলা নিয়ম অনুসরণ করে বিচারক মার্ক প্রদান করবেন। পাশাপাশি নিজের ড্রোনে ব্যবহার করা কোড ফাইল জমা দিতে হবে এবং সেই কোডের কার্যকারিতা  (efficiency) উপরও নির্দিষ্ট মার্কস থাকবে। এই দুইটি মার্কস একত্র করে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। দুইজন প্রতিযোগী সমান নম্বর পেলে কোন প্রতিযোগীর ড্রোন আগে মেজ সল্ভ করেছে এবং অবজেক্ট দেরিতে স্পর্শ করেছে এমন বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বিষয় যাচাই করা হবে।